কিরণ আহমেদের একগুচ্ছ কবিতা
কোনো এক রাতে
কানের গুহায় বাজে রজনীর শিস
ভরা পূর্ণচাঁদে
রুপালি জোছনাধারা
গুমোট জঙ্গলে নোঙর ফেলেছে জোনাকি পরিরা
নির্ঝর মাথার ভেতর বয়ে চলে ঘোড়া যেন অরুদ্ধ প্রগাঢ়
আঁচল সামলে চলো মেয়ে, পথ সেতো মেয়ে-প্রতিরূপ
চোখেমুখে লেগে থাকে অসাড় বাতাস
দুয়ারি কোথায় তুমি, দ্বার খোলো পরিকীর্ণ প্রকৃতির
খুঁজে দেখি পরাবৃত প্রেম
আঁধারের গালিচায় চান্দের অনন্ত মৈথুন
প্যাঁচার ঠোঁটের ফাঁকে স্বপ্নগুলো কেঁপে ওঠে
নড়েচড়ে বসে বুঝি নিমগ্ন অশ্বত্থ
পৃথিবীও খুঁজে পায় আদিম উত্তাপ, অনাবৃত প্রথম প্রহর
একদা যেখানে বসে তুমিও ফেলেছো নিশব্দে নোঙর
লাকসাম, বৃহস্পতিবার, রাত ৩:৪৭
বন্ধন
যাবে জানি,
যেতেই হয় আজ না হয় কাল।
পৃথিবীর সকল বন্ধন মুক্তির উপায় খুঁজে!
অথচ আমরা মানুষ
বোকার মতো বন্ধনের পিছে ছুটি,
সারাটা জীবন!
বন্ধনের নানান নামকরণ করতে চাই,
নানানভাবে সংজ্ঞায়িত করতে চাই,
দৃঢ় করতে চাই,
আইনের ফ্রেমেও বন্দি করতে চাই!
বন্ধনও এক সময় হয়তো শিকলে বন্দি হয়
আমি থাকি, তুমিও থাকো;
এমনকি সেও থাকে!
অথচ বন্ধনের প্রাণভোমরা থাকে না।
মানবিক উল্লাস
কেটে যাবে ঘোর, দেখা দিবে ভোর, রাত্রির শেষে
বোশেখের ঝড়, জীবাণু ইতর, চলে যাবে ভেসে।
শুধু,
আমরা কী হবো? মানুষ কি রবো? নাকি অমানুষ!
প্রকৃতির রীতি: ভীতি কিবা প্রীতি; হায় কাপুরুষ!
কখন কে রবে, শেষ কার হবে, বলতে পারিস?
মানুষের সেবা করে যাবে যে-বা, সেই পৃথিবীশ।
তাই,
এখনও সময়ে আছে
এখনও পৃথিবী হাসে
আঁধার সরিয়ে খুঁজে নে-রে আলো, মানবিক উল্লাসে।
নির্বিকার-বিকার
তারপর এসে গেল সেই মহা-সুনামি,
যথারীতি সুনামি আঘাত হানলো পরাক্রম শক্তিতে।
আশেপাশের কী হচ্ছে ভাবার ফুরসত পাওনি।
ঢাল-তলোয়ার সংগ্রহ করেছ ডজনে ডজন।
পার্কে, মাঠে-ময়দানে, ড্রেনের পাশে পড়ে আছে
কতো জীবন্ত লাশ: নোংরায় একাকার শরীর,
তাতে তোমার কী! তোমার তো যুদ্ধাস্ত্র আছেই।
এলকোহলে শরীর ধোও নিয়মিত তুমি।
ইশ! যদি এলকোহলের পুকুরে বসে থাকতে পারতে!
তুমি যে, কী যোদ্ধা, দুমাস যুদ্ধ করেছ বদমাশগুলোর সাথে।
আশেপাশে লাশের স্তুপ জমেছে আগাছার মতো।
আহ্! কী তৃপ্তির ঢেকুর, তোমার তো হয়নি কিছুই!
কিন্তু বুঝতেই পারোনি কখন বিকারগ্রস্ত তোমার নির্বিকার মনের প্রকোষ্ঠ
এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়েছে বদমাসগুলো!
সিগারেট
আজ রাতে তুমি বারবার কেঁপে উঠেছিলে
আঙুলের নির্ভেজাল আলিঙ্গনে।
রক্তচোখে নিজেতো নিঃশেষ হচ্ছিলেই
আমাকেও দুমড়েমোচড়ে কাবাব বানিয়ে ফেলেছো।
বারবার আমার দুঠোঁটে উষ্ণ চুম্বনে চুম্বনে
আমাকে করেছো নেশাসক্ত ।
আর আমিও একএকটি করে ঢেউ-সিঁড়ি অতিক্রম করেছি বৈতরণীর।
পিপীলিকার জীবন বৃথা যদি না পায় আগুনের স্বাদ।
আগুন নিভে জলে, তুমি সেই জল
নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে আগুনকে স্বর্গে পাঠাও!
ঘাসফুল
বাড়িটি নীরব, কেটে যায় এই একাকী জীবন
বুঝতে পারিনি আজো আমি জীবনের ব্যাকরণ।
মলিন মুখের রাতের আকাশ আমাকে ভাবায়
কখনও সূর্য গরম উনুন, পুড়েছি লাভায়
এভাবেই দিন গত হয়ে যায় ঠিকঠাক নির্ভুল।
হঠাৎ বাগানে পেয়ে যাই ঘাসে তোমার কানের দুল।
ঘাসফুল
হায় ঘাসফুল।
.
মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা ভালোবাসা-ইতিহাস
মনের চাতক বৃষ্টি-কাতর, পরেছে প্রেমের ফাঁস
তোমার দু’চোখে স্বপ্নেরাে হাসে , জোছনার বসবাস
আমারও প্রেমটা জমে উঠেছিলো, রাত-দিন বারোমাস
বাগানের ঘাসে ফোটেছিলো ফুল, দুজনে খুব আকুল
ঘাসফুল
হায় ঘাসফুল।
হঠাৎ বাগানে পেয়ে যাই ঘাসে তোমার কানের দুল।
.
বসন্ত যায় বৈশাখ আসে কালবৈশাখী ঝড়
মনের স্থপতি ঝড়ে ঝরে গেছে, ভেসে গেছে যেন খড়
স্মৃতির জানালা খোলে দিলে তুমি, ভাসিয়ে মনের কূল
ঘাসফুল
হায় ঘাসফুল।
হঠাৎ বাগানে পেয়ে যাই ঘাসে তোমার কানের দুল।